কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
মোছাঃ পারভীন সুলতানা, গ্রাম : পায়রাবন্দ, উপজেলা : মিঠাপুকুর, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : সরিষার কাণ্ড পচা রোগ দমনে কী করণীয়?
উত্তর : সরিষার কাণ্ড পচা রোগ বীজ ও মাটিবাহিত রোগ। বাড়ন্ত গাছে বিশেষ করে ফুল ধরার সময় এ রোগ দেখা যায়। আর এ রোগে আক্রান্ত স্থানে সাদা তুলোর মতো মাইসেলিয়াম দেখা যায়। এতে করে গাছ পচে মারা যায়। আক্রান্ত গাছের কাণ্ড চিরলে কালো রঙের স্কেলোরেশিয়া দেখতে পাওয়া যায়। সেজন্য বীজ বপনের আগে কার্বেনডাজিম গ্রুপের প্রোভেক্স ২.৫ গ্রাম প্রতি কেজি বীজে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। আর যদি রোগ দেখা যায় তবে রোভরাল প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ৩ বার অর্থাৎ গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে, ফুল ও পড ধরার পর্যায়ে প্রয়োগ করলে রোগ দমন করা সহজ হয়।
মো. আবদুল্লাহ, গ্রাম : নকিপুর, উপজেলা : শ্যামনগর, জেলা: সাতক্ষীরা
প্রশ্ন : সয়াবিন গাছের পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ রোধে কী করণীয়? জানাবেন।
উত্তর : সয়াবিন গাছের পাতা মোড়ানো পোকা গাছের বাড় বাড়তি ও ফল ধারণ বাধাগ্রস্ত করে। আর এতে করে ফলন কমে যায়। সে কারণে এ পোকার কীড়া দেখা গেলেই হাতবাছাই করে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া প্রতি বিঘা সয়াবিন জমিতে ৮ থেকে ১০টি কাঠি পুঁতে দিলে পোকাভোজী পাখি এসে এ পোকার কীড়া খেয়ে ফেলার মাধ্যমে এ পোকা দমন করা যায়। তারপরও যদি পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায় তবে সেভিন ২০ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।
মো: নুরুজ্জামান শেখ গ্রাম : খাটুরিয়া, উপজেলা : গোবিন্দগঞ্জ, জেলা : গাইবান্ধা
প্রশ্ন : আলু গাছের শাখায় কালো রঙের দাগ ও ক্ষত এবং অনেক ক্ষেত্রেই গাছের ডাল বেশি দেখা যায়। পাতা ভাইরাসের ন্যায় হালকা মোড়ানো হয়ে যায় ও আলুতেও কালো দাগ পড়ে। এ সমস্যার সমাধান জানাবেন।
উত্তর : এ ধরনের রোগকে আলুর স্কার্ফ রোগ বলা হয়। এটি আলুর ক্ষতিকারক রোগ। কারণ এ রোগাক্রান্ত আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। এ সমস্যা রোধে প্রত্যায়িত ও রোগমুক্ত ভালো মানের আলুবীজ ব্যবহার করা দরকার। একই জমিতে বার বার আলু ফসল চাষ না করে শস্যপর্যায় অবলম্বন করা। আর বীজ আলু মাটির বেশি গভীরে রোপণ করা যাবে না। এছাড়া আলুবীজ শোধন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স অথবা ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম মিশিয়ে আলুবীজ শোধন করে বপন করা যায়। আর রোগের আক্রমণ বেশি হলে ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে গাছের গোড়া ভিজিয়ে সঠিকভাবে স্প্রে করতে হবে। আর জমিতে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনি উপকৃত হবেন।
মো. আবদুর রহমান, গ্রাম: দৌলতপুর, উপজেলা : নড়াইল সদর, জেলা : নড়াইল
প্রশ্ন : ফুলকপির চারা জমিতে কাটা অবস্থায় পড়ে আছে। এ অবস্থায় কি করণীয়।
উত্তর : ফুলকপির কাটুই পোকার আক্রমণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। চারার আশপাশে মাটি খুঁড়লে এ পোকা পাওয়া যায়। ফুলকপির কাটুই পোকা দমনের জন্য ক্ষেতে ডাল পুঁতে দেওয়া যায়। এতে পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়। এছাড়া ক্লোরপাইরিফস গ্রæপের কীটনাশক যেমন ডারসবান ৫ মিলি বা সেতারা ২ মিলি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকেল বেলা গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হয়। এসব ব্যবস্থা নিলে এ পোকা সহজেই দমন করতে পারবেন।
মো: বারেক হোসেন, গ্রাম : বামইন, উপজেলা : নিয়ামতপুর, জেলা : নওগাঁ
প্রশ্ন : ঢেঁড়স গাছের পাতা হলুদ এবং পাতার শিরাগুলো স্পষ্ট ও স্বচ্ছ হয়ে যায়। এ অবস্থায় কী করব?
উত্তর : এ ধরনের রোগাক্রান্ত গাছ দেখামাত্রই তুলে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। এ রোগটি ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে। আর ভাইরাসটি বাহক পোকার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। সে কারণে বাহক পোকা দমনের জন্য ডায়মেথয়েট গ্রুপের রগর, টাফগর, পারফেকথিয়ন ১ মিলি প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
মোছা: জান্নাতুল ফেরদৌস, গ্রাম : সনগাঁও, উপজেলা : বালিয়াডাঙ্গি, জেলা : ঠাকুরগাঁও
প্রশ্ন : রসুন গাছের পাতা ঝলসে যায় এবং পরবর্তীতে পাতা শুকিয়ে যায়। পাতার উপর ছোট ছোট গোল দাগ পড়ে। প্রতিকার জানাবেন।
উত্তর : আপনার উল্লিখিত এ সমস্যাটি রসুনের পাতা ঝলসানো রোগ বলে। এ রোগের কারণে পাতা প্রথমে হলুদ পরে বাদামি রঙ ধারণ করে। এ রোগ দমনের জন্য বর্দোমিক্সার (১০ গ্রাম চুন, ১০ গ্রাম তুঁত এর সাথে ১ লিটার পানি) বা ডায়থেন বা রোভরাল ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে এ রোগ দমন করতে পারবেন।
মৎস্য বিষয়ক
মো: সুবির আলী, গ্রাম : মাছহাড়ি, উপজেলা : কাউনিয়া, জেলা: রংপুর
প্রশ্ন : মাছের সম্পূরক খাবার তৈরির নিয়ম ও প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে জানাবেন।
উত্তর : সম্পূরক খাদ্য তৈরির নিয়ম হলো-ফিশমিল ১০%, চালের কুঁড়া ৫৩%, সরিষার খৈল ৩০.৫০%, ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ ০.৫% ও চিটাগুড় ৬% মেপে নিতে হয়। এগুলো গুঁড়া করে মিশাতে হবে। এরপর পানি দিয়ে মণ্ড তৈরি করে পিলেট মেশিনে দিয়ে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করতে হবে। এগুলো শুকিয়ে মাছকে খেতে দেয়া যাবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়। খাদ্যগুলো পুকুরে পানির নিচে নির্দিষ্ট গভীরতায় দিতে হয়। ভাসমান খাদ্য দিলে খাদ্যের অপচয় কম হয়। সম্পূরক খাদ্য দিলে মাছের খাদ্যের অভাব নিশ্চিত দূর হয়। মাছ দ্রত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও টোপাপানা, ক্ষুদিপানা, কলাপাতা, নেপিয়ার বা প্যারা জাতীয় নরম ঘাস, পাতা ইত্যাদি প্রতিদিন লবণ-পানিতে ধুয়ে সকাল-বিকাল পুকুরে আয়তাকার বেষ্টনীর মধ্যে সরবরাহ করা যেতে পারে।
মো. আক্কাস আলী, গ্রাম : খাটুরিয়া, উপজেলা : ডোমার, জেলা: নীলফামারী
প্রশ্ন : চিংড়ি মাছের নরম ও স্পঞ্জের মতো দেহের কারণ ও এ সমস্যার প্রতিকার বিষয়ে জানতে চাই।
উত্তর : পানিতে ক্যালসিয়াম কমে গেলে, অ্যামোনিয়া ও তাপমাত্রা বেড়ে গেলে, পুষ্টিকর খাদ্য কমে গেলে এবং পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গেলে এ সমস্যা দেখা দেয়। আর এ রোগে চিংড়ির খোলস নরম হয়ে যায়। উপর থেকে চাপ দিলে নিচে ডেবে যায়। খোলস ও মাংসের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি হয়। এ সমস্যার সমাধানে মজুদ ঘনত্ব কমিয়ে পুকুরে অন্তত ৫০% পানি বদল করা। পুকুরে ২ থেকে ৩ মাস অন্তর চুন প্রয়োগ এবং পুকুরে সার ও খাদ্য প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনি উপকার পাবেন।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
মার্জানা আক্তার, গ্রাম : মৌনগর, উপজেলা : কানাইঘাট, জেলা: সিলেট
প্রশ্ন : আমার ভেড়ার বয়স খাবার খেতে চায় না। রক্ত শূন্যতা দেখা যাচ্ছে। দুর্বল ও ওজন কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কি করণীয়?
উত্তর : আক্রান্ত ভেড়াকে এনডেক্স বা রেনাডেক্স ১৫০০ মিলিগ্রাম (৭০ কেজির জন্য ১টি ট্যাবলেট) খাওয়াতে হবে। ভেড়াকে বছরে অন্তত দুবার অর্থাৎ বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষার শেষে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।
শুভচন্দ্র, গ্রাম : মূলগ্রাম, উপজেলা : কালাই, জেলা : জয়পুরহাট
প্রশ্ন : আমার টার্কির বয়স ১ মাস। টার্কির গায়ে অতিরিক্ত জ্বর। সব টার্কি একসাথে জমা হয়ে থাকছে। সাদাটে চুনের মতো ডায়রিয়া হচ্ছে। কি করব?
উত্তর : এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যার নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তবে এই রোগ হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং অন্যান্য রোগের সংক্রমণ খুব সহজেই হয়। সেজন্য নিমেক্তো ব্যবস্থপনা গ্রহণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
সিপ্রোফ্লক্সাসিন ১ মিলি ১ লিটার খাবার পানেিত ভিটামিন সি ১ গ্রাম ৩ লিটার খাবার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে ৩ থেকে ৫দিন। য়
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত)
কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন
উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল নং ০১৭১১১১৬০৩২, iquedae25@gmail.com